এস এম খুররম আজাদঃ
জামালপুরের মাদারগঞ্জে প্রায় ৭৫০ একর আবাদি (তিন ফসলী) জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ।
এ উপলক্ষে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে '৭৫০ একর কৃষি জমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি'র উদ্যোগে উপজেলার জোড়খালী ইউনিয়নের কাইজ্জার চরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
আতামারি, কুকুরমারি, ফুলজুর, ধারাবর্ষা, কামারপাড়া ও বারইপাড়া এলাকার সহস্রাধিক নারী-পুরুষ এতে অংশগ্রহণ করে।
মানববন্ধন শেষে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় এলাকাবাসী জানান, নদী সিকস্তি অঞ্চলের ডিএস, সিএস, এসএ রেকর্ড ও জমিদারী আমলের পয়স্তি মালিকানা হরণ করে কাইজ্জার চর এলাকায় প্রায় ৭৫০ একর জমি ভুল ব্যাখ্যা করে বিআরএস অন্তর্ভূক্তি থেকে বাদ দেয়া হয়। বাপ-দাদার আমলের সে সমস্ত মালিকানা জমি খাস খতিয়ানভূক্ত করে সেখানে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। এতে জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে চরাঞ্চলের ১০ সহস্রাধিক মানুষ।
কাইজ্জার চর এলাকার সাখাওয়াত মণ্ডল বলেন, এখানে এক শতাংশ জমিও অনাবাদী নয়, তিন ফসলী জমিকে অনাবাদী দেখিয়ে বিদ্যুৎ প্রকল্প করা হচ্ছে। অথচ এসব জমিতে একবিঘায় প্রায় ৫০ মণ ভুট্টা, ৩০-৩৫ মণ ধানসহ প্রতি মওসুমে বিঘাপ্রতি দেড়-দুই লাখ টাকার বিভিন্ন ফসল উৎপন্ন হয়।
কৃষক আশরাফ হোসেন বলেন, কাইজ্জার চরে তার ২৫ বিঘা জমি আছে। গৃহিণী ফাতেমা বেগম বলেন, এখানে তার ৫ বিঘা জমি আছে। সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস চরাঞ্চলের চাষাবাদ। জমিগুলো সরকার নিয়ে গেলে পথে বসতে হবে বলে তারা জানান।
হাজী রসুল মিয়া বলেন, বাপদাদার আমল থেকে তারা এখানে বসত করে আসছেন। আবাদী জমি ছাড়াও এ এলাকায় শত শত বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে। একবিন্দু রক্ত থাকতে তারা এ প্রকল্প স্থাপন করতে দেবে না বলেও হুশিয়ারি জানান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী ও ভূমিমন্ত্রী বলেছেন, আবাদী জমি নষ্ট করে শিল্পকারখানা করা যাবে না; কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন জমিগুলো অনাবাদী দেখিয়েছে। তাদের দাবি, হয় তাদের মেরে ফেলুক, নয়তো এ প্রকল্প বাতিল করুক।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, 'নদী ভাঙলে জমি খাস' আইন বাতিল বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক কবি আলতাফ হোসেন, চরাঞ্চল ভূৃমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, নাট্যকার বীরমুক্তিযোদ্ধা আলী আক্কাস, জেলা যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, গোলাম ফারুক মাস্টার প্রমুখ।
এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে জামালপুরের জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায় মুঠোফোনে বলেন, ওই জমিগুলো খাস বলে জানি, তবে তিন ফসলী কি-না, তা তদন্ত করে দেখতে হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন করা হবে বলে তিনি জানান।