এস এম খুররম আজাদঃ
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সাতপোয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এ কে এম শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে নামজারি ও দাখিলার নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, বিত্তবানদের উৎকোচের বিনিময়ে খাস জমি বন্দোবস্ত, সেবাগ্রহীতাদের সাথে অসদাচরণ, মাত্রাতিরিক্ত অনিয়মসহ হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয়ে ভুক্তভোগীরা কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হলেও রহস্যজনকভাবে তিনি বহাল তবিয়তে আছেন।
অভিযোগ সূত্র জানায়, ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এ কে এম শহীদুল্লাহ্ ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে সাতপোয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগদান করেন। একই উপজেলায় তাঁর বাসস্থান হলেও একযুগেরও বেশি সময় ধরে আশপাশের ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে পর্যায়ক্রমে এবং বর্তমান কর্মস্থলে টানা চারবছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে ভূমি সেবাসমূহ সরকার অনলাইন চালু করলেও সাতপোয়া ভূমি অফিসের কর্মকর্তা এ কে এম শহীদুল্লাহ্ অননুমোদিতভাবে কার্যালয়ের ভেতরেই তাঁর ভাতিজাকে লেপটপ দিয়ে বসিয়ে চাচা-ভাতিজা মিলে সবধরনের সেবার আবেদনপত্র চুক্তিভিত্তিক করে যাচ্ছেন। প্রতিটি নামজারি (খারিজ) সরকার নির্ধারিত মূল্য এক হাজার ১০০ টাকার স্থলে সর্বনিম্ন ৮-১০ হাজার টাকা ও ঝামেলাপূর্ণ জমি হলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়া ৩০০ টাকার দাখিলা (খাজনা) কেটে পাঁচ হাজার টাকা আদায় এবং ২০০-৩০০ টাকার বিনিময়ে বিআরএস পর্চার ফটোকপি বিক্রি করেছেন।
এদিকে খাসজমি বন্দোবস্তের বেলায় ভূমিহীনদের অগ্রাধিকার থাকলেও সাতপোয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা এ কে এম শহীদুল্লাহ্ মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে নিয়ম অমান্য করে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের খাসজমি বন্দোবস্ত দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এরমধ্যে গতবছরের ১৯ অক্টোবর দাশেরবাড়ী মৌজায় একই পরিবারের তিনভাইকে ভূমিহীন দেখিয়ে পৃথক তিনটি দলিলে ৭৪ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত করে দেন। যার দাগ নম্বর যথাক্রমে ৩৪২, ৩৫৮ এবং কবুলিয়তনামা ৫৭৯৭, ৫১৯৮ ও ৫২০০।
সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে চররৌহা গ্রামের সুলতান আকন্দ, বাঘমারা গ্রামের মো. ইসমাইলসহ ভুক্তভোগী অনেকেই জানান, নানা অনিয়ম ও অসদাচরণের বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গত ১৮ মে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত লিখিত অভিযোগের আলোকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক তাঁর কাছে আবেদন করলেও রহস্যজনক কারণে কোনো প্রতিকার মেলেনি।
এদিকে এ কে এম শহিদুল্লাহ্ দুর্নীতি করে গড়ে তুলেছেন টাকার পাহাড়। সম্প্রতি তিনি জেলা শহরে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের জমি ক্রয় করেছেন বলে জানা গেছে।
বক্তব্য জানতে চাইলে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এ কে এম শহীদুল্লাহ্ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'সবকিছু অনলাইনে হয় অফিসে তেমন কোনো কাজ নেই।' তবে অফিসের মধ্যেই নিজের ভাতিজাকে দিয়ে অনলাইনে কাজ করানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এটা আমার ঠিক হয়নি, কিন্তু লোকজনের সুবিধার জন্যই অনলাইনে আবেদন নিজেরাই করে দিচ্ছি।' ধনাঢ্য পরিবারকে খাসজমি বন্দোবস্তের ব্যাপারে বলেন, 'ইউপি চেয়ারম্যান ভূমিহীন প্রত্যয়ন দেয়ার পরই খাসজমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে।'
এব্যাপারে সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসিল্যান্ড) সাদ্দাম হোসেন মুঠোফোনে বলেন, 'শহিদুল্লাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অনিয়মের অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলে শুনেছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বললে তা পালন করা হবে।'
সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, 'অনিয়মের বিষয়গুলো খোঁজখবর নিয়ে দেখবো।'
জামালপুরের জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায় মুঠোফোনে জানান, এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়গুলো তদন্ত চলছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের নির্দেশ পেয়েছি, সেটাও ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।