এস এম খুররম আজাদ :
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকদের হাত ও দাঁত ভাঙার হুমকিদাতা কলেজ অধ্যক্ষ সাইদুল হাসান সাইদকে অবশেষে বরখাস্ত করা হয়েছে।
উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের সুজাত আলী (ডিগ্রী) কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে কলেজ পরিচালনা পর্ষদ (গভর্নিংবডি) তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাতে কলেজ গভর্নিংবডির সভাপতি ও বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. সিদ্দিকুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি গণমাধ্যমের হাতে আসে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লেখা চিঠিতে তিনি জানান, সুজাত আলী (ডিগ্রী) কলেজের অধ্যক্ষ সাইদুল হাসান সাইদ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে আচরণবিধি বহির্ভূত ও হুমকিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা এবং গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে যান। এ প্রেক্ষিতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১-এর ১৯ ধারা মোতাবেক তাকে ২৭ এপ্রিল হতে অধ্যক্ষ পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসাথে কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুল হামিদকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এদিকে গভর্নিংবডির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বরখাস্তের চিঠিতে স্বাক্ষর করে বৃহস্পতিবার (৯ মে) পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গমন করেন। একইদিন বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ সাইদুল হাসান জেলহাজত থেকে জামিনে আসায় ভয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্ব বুঝে নিতে গড়িমসি করছে বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে একজন কলেজশিক্ষার্থীর অভিভাবক আবুল হোসেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
তিনি জানান, পাঁচদিনের রিমান্ড ও হাজতবাস করেও বিতর্কিত অধ্যক্ষ স্বপদে বহাল থাকার চেষ্টা করছেন। এতে কলেজের আর্থিকসহ সার্বিক জটিলতা, জনমনে বিভ্রান্তি ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলামের পক্ষ নিয়ে তার উপস্থিতিতে ২৩ এপ্রিল রাতে পিংনা ইউনিয়নের নির্বাচনী পথসভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এবং সুজাত আলী কলেজের অধ্যক্ষ সাইদুল হাসান সাইদ উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন।
প্রতিপক্ষের লোকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, "আমাদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে, তাদের জবান আমরা বন্ধ করে দেবো। আমরা আগামী ৮ই মে'র নির্বাচনে অন্য কোনো মার্কার এজেন্ট দিতে দেবো না। প্রতিপক্ষের লোকদের দাঁত ভেঙে দেওয়া হবে, যাদের দাঁত নেই, তাদের চাপার হাড্ডি ভেঙে দেওয়া হবে।"
এসময় সাইদুল হাসানের বক্তব্যের সমর্থনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মোতাহার হোসেন জয় বলেন, "অন্য কোনো মার্কার এজেন্ট কোনো কেন্দ্রে দিলে হাত ভেঙে যমুনা নদীতে নিক্ষেপ করা হবে।"
এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে ২৭ এপ্রিল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন বিধিমালা) আচরণ ২০১৬ এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা, ২০১৩-এ আইনে মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই পুলিশ ওই দুইজনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়।
এমনকি প্রার্থীর উপস্থিতিতে এমন বক্তব্য দেওয়ায় আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলামের প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে রফিকুল ইসলাম প্রার্থিতা ফিরে পেলেও ৮ মে'র অনুষ্ঠেয় সকল পদের নির্বাচন ভোটগ্রহণের আগেরদিন মঙ্গলবার (৭ মে) স্থগিত ঘোষণা করে।
সর্বশেষ হুমকিদাতা ও বিতর্কিত অধ্যক্ষ সাইদুল হাসান সাইদকে তার পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করলো কলেজ গভর্নিংবডি।
এব্যাপারে সুজাত আলী (ডিগ্রী) কলেজের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুল হামিদের বক্তব্য জানতে বারবার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
কলেজের সহকারী অধ্যাপক আল মামুন মিয়া মুঠোফোনে জানান, গভর্নিংবডির সকল সদস্যের সাথে কথা বলে সভাপতি বিধি মোতাবেক অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। তিনি চিঠিতে স্বাক্ষর করে হজে চলে যান এবং বৃহস্পতিবার কলেজের শিক্ষকরা বৈঠকে বসেন। এসময় অধ্যক্ষের জামিনের খবর আসলে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ করা হয়।
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার সাময়িক বরখাস্ত থাকার বিধান, কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্ব বুঝে নিতে গড়িমসি করছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।