জামালপুর প্রতিনিধি :
বহুল
আলোচিত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামী মাহমুদুল আলম ওরফে বাবু চেয়ারম্যান (সাময়িক বরখাস্তকৃত) জামিনে এসেই চাঞ্চল্যকর বক্তব্য দিয়েছেন। কর্মীসমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, 'জেলে বসে সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের সাথে তার অনেকবার কথা হয়েছে। এ মামলা মীমাংসা
করে দেওয়া হবে বলে এমপি তাকে আশ্বস্ত করেছেন।'
বুধবার
(১০ জুলাই) রাত থেকে ৫ মিনিট ২০
সেকেন্ডের এ বক্তব্যের ভিডিও
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে নিহত সাংবাদিকের পরিবারে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। চলমান মামলার নিরপেক্ষতা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সংশয়।
এদিকে
একজন চিহ্নিত সন্ত্রাস ও হত্যাকারী জামিনে
বের হওয়ার পর তাকে মোটরসাইকেল
শোভাযাত্রা, এলাকায় ফুলের তোড়া দিয়ে বরন ও কর্মীসমর্থকদের মধ্যে
উৎফুল্লতা বিরাজ করায় পর এলাকায় মিশ্র
প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে।
জামালপুর
জেলা কারাগারের জেলার আবু ফাত্তাহ্ জানান, সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবুকে হাইকোর্ট স্থায়ী জামিন দিয়েছেন। হাইকোর্টের আদেশের কপি কারাগারে পৌঁছানোর পর বুবার বিকেল
৫টার দিকে কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
কারাগার
থেকে বের হওয়ার পর জেলগেটে পরিবারের
লোকজন ও সমর্থকরা তাকে
বরণ করে। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিয়ে বাবু চেয়ারম্যানকে বকশিগঞ্জে নেওয়া হয়। এলাকায় বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের দায়ে চিহ্নিত তার সমর্থকরা ফুলের মালা এবং
হাততালিসহ স্লোগান দিয়ে বরণ করে।
রাত
সাড়ে ৭টার দিকে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কামালেরবার্ত্তী কেবি হাইস্কুলে বাবু চেয়ারম্যান কর্মীসমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশিগঞ্জ)
আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী
লীগের কোষাধ্যক্ষ নূর মোহাম্মদের সঙ্গে জেলে বসেই তার নিয়মিত যোগাযোগ হয়েছে।
বক্তব্যে
তিনি বলেন, 'এবারের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ সাহেব। উনি অত্যন্ত ভালো লোক। আমার সাথে জেলে অনেকবার কথা হয়েছে। আমার ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের কথা বলেছে। বলেছে—বাবু তুমি বের হয়ে আসো। এই মামলা তোমাকে
মীমাংসা করে দেবো'।
উপজেলা
চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সাত্তারের সাথেও কারাগার থেকে তার কথা হয়েছে বলেও তিনি জানান। এছাড়া নাদিম হত্যার সাথে তিনি জড়িত নন এবং তাকে
রাজনৈতিকভাবে জড়ানো হয়েছে বলেও দাবি করেন।
এ
বক্তব্যের পর নিহত সাংবাদিকের
পরিবারে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ
বিষয়ে গোলাম রাব্বানী নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন, 'একজন সংসদ সদস্য যদি জেলবন্দি আসামীর সাথে যোগাযোগ রাখেন এবং চলমান মামলা মীমাংসার কথা বলেন, তাহলে বিচার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি।'
তিনি
আরও জানান, বাবু চেয়ারম্যানের ছবি যুক্ত করে তার কোনো কোনো সমর্থক ফেসবুকে 'এবার খেলা হবে'—লিখে পোস্ট করছে এবং তার কর্মীসমর্থকদের মধ্যে উৎফুল্লতা বিরাজ করছে। ফলে চলমান মামলার নিরপেক্ষতা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
এদিকে
মাহমুদুল আলম বাবুর বক্তব্য ভূয়া বলে দাবি করেছেন সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, 'তার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। তাছাড়া হত্যা মামলা মীমাংসা হয় কিভাবে'?
উল্লেখ্য,
গতবছরের ১৪ জুন রাতে
পেশাগত কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে সাংবাদিক নাদিম বকশিগঞ্জের পাটহাটি এলাকায় বাবু চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। পরদিন ১৫ জুন তিনি
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
১৭
জুন নিহত নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান আসামী করে ২২ জনের নামোল্লেখসহ
অজ্ঞাত ২০-২৫ জনের
বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।
ওইদিন
পঞ্চগড়ের সীমান্ত এলাকা থেকে বাবুকে র্যাব গ্রেফতার
করে। পরে র্যাবের লিগ্যাল
অ্যান্ড মিডিয়া উইং ডিরেক্টর কমান্ডার খন্দকার আল মঈন প্রেসব্রিফিংয়ে
বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল। নাদিম বাবু চেয়ারম্যানের বিভিন্ন অসঙ্গতির প্রতিবেদন করায় তিনি ক্ষুব্ধ হন এবং এই
হত্যাকাণ্ড ঘটান।
এদিকে
মাহমুদুল আলম বাবু রিমান্ড শেষে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জামালপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াসের আদালতে হত্যাকাণ্ডে
জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন বলে বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী জানিয়েছিলেন।
প্রধান
আসামী বাবু গ্রেফতার ও সর্বশেষ জামিনে
মুক্ত হলেও হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত তার ছেলে রিফাত একবছরেও ধরাছোঁয়ার বাইরে। মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করলেও অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে বাদীর পরিবারে।